দাদু নেই আর

 শৈশবে যার হাত ধরে, যার আদরে বেড়ে উঠি, যদি আমার জীবনকালের একমাত্র সুখের স্মৃতির পাতা কেউ আমাকে খুঁড়ে আনতে বলে তাহলে একটা মাত্র নাম আমার মন থেকে ওঠে আসবে, - দাদু। আমার বাপের বাপ। দাদুর মৃত্যুর পর পৃথিবীতে আজ দাদু বিহীন একটি দিন। . সম্পর্কের সূতোর মতো এমন অভেদ্য সূতো জগতে আর একটিও নেই। ভালোবাসা বুকের নিবিড় জমিনে বেড়ে উঠে সযত্নে। আমাদের সম্পর্ক একদম নাভীমূল থেকে উৎসারিত ছিলো এই সত্যটুকু আমরা জানি দাদু, তাই তোমার অস্তিত্বহীনতা নিয়ে আমার কোন ভ্রুক্ষেপ নেই। ভালোবাসাতো পাত্র বিচারে হয়না, উপস্থিতি কিংবা অনুপস্থিতিও মুখ্য নয়। ভালোবাসা ভালোবাসারই মত চিরন্তন বহতা নদীর স্রোত—সে জানে না নদীর অপারগতা কিংবা চরের দুর্দণ্ড প্রতাপশালী মনোভাব। ভালোবাসা কেবল বহিয়াই চলে, কেবল বহিয়াই চলে। . কেউ যেনো ভুল করেও তোমার উপর বিরক্ত না হয় এরকম একটা দিনে তুমি নিজেকে গুটিয়ে নিলে—একেবারে চুপচাপ, কাউকে তোমার কষ্ট বুঝার আক্ষেপটুকু পর্যন্ত না দিয়ে। কে জানে, পিছে আবার কে বিরক্ত হয় তোমার শেষবেলাতে? জগতে তুমিতো কম দেখোনি মানুষের প্রতাপী মুখ। তোমার গর্ভের সন্তানেরা পর্যন্ত তোমাকে কম শেখায়নি, দাদু। তুমি একদম বুদ্ধিমানের ম...

খোলা চিঠি

প্রিয়তা,

দুঃখ আমার কতটুকুই বা! এখন তো মনে হয়, আমি বুঝি রবীন্দ্রনাথ, নেপোলিয়ানের চেয়ে সুখেই আছি! রবীন্দ্রনাথ তার প্রেমিকাকে, পরে অবশ্য বউ, মৃণালিনী দেবীকে কত ভালবাসতেন – আহা! তুমি কি জানো – আদর করে রবি ঠাকুর তাকে ডাকতেন ‘ছোট বউ’ , সাথে জুড়ে দিতেন ‘ভাই’ – মানে ‘ভাই ছোট’ অথবা ‘ভাই ছোট বউ’। কত প্রেমের কথা, কত ভালবাসার কথা – আর রবীন্দ্রনাথের কত যে চাওয়ার থাকতো সেসব চিঠিতে। কিন্তু মৃণালিনী, সেই আদরের মানুষটি থাকতেন চুপ। কদাচিৎ উত্তর দিতেন। রবি ঠাকুরের বড় আক্ষেপ ছিল বটে! আমি তো রবীন্দ্র নই, তুমি যে এখন ও অধরা! নাইবা দিলে ধরা।

হ্যাঁ, শেষমেশ আমি পারলাম না। এইযে দেখো, আবার তোমার কাছেই ফিরে এলাম। আমি কি পাগল, অবজ্ঞা কাকে বলে আমি বুঝি না? কিন্তু একটা কথা কি জানো, ভালবাসা কি দুই পক্ষের না হলেই নয়? এক পক্ষ থেকে আমিই না হয় ভালবেসে গেলাম তোমায়। নিশ্চয় ভাবছ এখন, “ওহে মূর্খ , আমিই কি পাগল ভেবেছ, না পেলে আর করবেটা কি। এক পক্ষ থেকেই ভালোবাসো”।

হ্যাঁ, ঠিক তাই। আমি পাগল, আমি আর পারছি না। ভালবাসতে না পারলেও যে কষ্ট হয়, এখন বুঝি। যাক সে সব, চাওয়া না চাওয়াই কি আসে যায়। মন কি আর শুনবে? মনের কাছে সব বাঁধাই যে তুচ্ছ, একেবারে দুর্বল। একবার ভালবাসার স্বাদ যখন পেয়েছে, এই মনটাকে কি আর আটকানো যাবে?

প্রিয়তা, আজ যেন কি হল আমার, তোমায় খুব মনে পড়ছে। কি অদ্ভুত ব্যাপার, যার জন্য এত কথা, সেই তোমার চেহারাটাই ঠিক মনে করতে পারি না। তোমাকে কি ঠিকমত দেখেছি আমি, তোমার দেহটাকে! দেখার মত শুধু তো চোখদুটোই দেখা হল। তোমার মুখচ্ছবিটা একটু – আধটু মনে পড়ে, আর বেশি করে মনে পড়ে ওই হতচ্ছাড়া চোখদুটো। আমায় জ্বালিয়ে মারে এখনো! আগে খুব শুনতাম ‘মিষ্টি চেহারা’, কিন্তু বুঝিনি। ভাবতাম – মিষ্টি আবার চেহারা হয় নাকি? এখন ভালো করে বুঝি, চেহারা কত মিষ্টি হতে পারে! ঠিক মনে নেই , কোন এক মনীষী বলেছিলেন – “প্রেমের সাথে দেহের একটা সম্পর্ক আছে। এই দেহের আকর্ষণই নাকি মানুষকে প্রেমে পড়তে নিভৃতে কাজ করে যায়”। ঠিক জানি না, তবে এটুকু জানি তোমায় দেখা হয়নি ঠিকমত। দেখিনি তো, আমি কিচ্ছু দেখি নি তোমার, তোমার দেহ! – তবুও বোকার মত এমন প্রেমে পড়লাম কেন? এমন হতে পারে, তোমার চোখদুটোই আমাকে দিয়েছে তোমার সমস্ত পরিচয়। তোমার দেহের, তোমার মনের – সব খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে। হতেও পারে কিন্তু!

আমারো ঠিক তাই মনে হয় কোয়েলিয়া, ফিরে এসো তুমি। পৃথিবী হয়তো জয় করতে পারবো না, কিন্তু যা পারবো সেও কম হবে না। শুধু পাশে এসো, শক্তি-সঞ্চারিণী রূপে। ক্ষিণজীবী, ক্ষুদ্র জীবনে – আর কেন দূরে থাকা। একবারটি এসো, এসো জীবন সঞ্জিবিনী রূপে, সজীব কর, পূর্ণ কর আমায়! এসো কোয়েলিয়া।

Comments

Popular posts from this blog

ব্যথার আদরে অবুঝ আঙুল রাখলাম

দাদু নেই আর

ভালবাসার গুরুত্ব