দাদু নেই আর

 শৈশবে যার হাত ধরে, যার আদরে বেড়ে উঠি, যদি আমার জীবনকালের একমাত্র সুখের স্মৃতির পাতা কেউ আমাকে খুঁড়ে আনতে বলে তাহলে একটা মাত্র নাম আমার মন থেকে ওঠে আসবে, - দাদু। আমার বাপের বাপ। দাদুর মৃত্যুর পর পৃথিবীতে আজ দাদু বিহীন একটি দিন। . সম্পর্কের সূতোর মতো এমন অভেদ্য সূতো জগতে আর একটিও নেই। ভালোবাসা বুকের নিবিড় জমিনে বেড়ে উঠে সযত্নে। আমাদের সম্পর্ক একদম নাভীমূল থেকে উৎসারিত ছিলো এই সত্যটুকু আমরা জানি দাদু, তাই তোমার অস্তিত্বহীনতা নিয়ে আমার কোন ভ্রুক্ষেপ নেই। ভালোবাসাতো পাত্র বিচারে হয়না, উপস্থিতি কিংবা অনুপস্থিতিও মুখ্য নয়। ভালোবাসা ভালোবাসারই মত চিরন্তন বহতা নদীর স্রোত—সে জানে না নদীর অপারগতা কিংবা চরের দুর্দণ্ড প্রতাপশালী মনোভাব। ভালোবাসা কেবল বহিয়াই চলে, কেবল বহিয়াই চলে। . কেউ যেনো ভুল করেও তোমার উপর বিরক্ত না হয় এরকম একটা দিনে তুমি নিজেকে গুটিয়ে নিলে—একেবারে চুপচাপ, কাউকে তোমার কষ্ট বুঝার আক্ষেপটুকু পর্যন্ত না দিয়ে। কে জানে, পিছে আবার কে বিরক্ত হয় তোমার শেষবেলাতে? জগতে তুমিতো কম দেখোনি মানুষের প্রতাপী মুখ। তোমার গর্ভের সন্তানেরা পর্যন্ত তোমাকে কম শেখায়নি, দাদু। তুমি একদম বুদ্ধিমানের ম...

দুর্গাপূজা, এবং এক অধরা প্রেম

উপরে নীল আকাশ আর নীচে নদীর পাশে ফোটা কাশঁফুল মায়ের আগমনীকেই নির্দেশ করে। দেখতে দেখতে দূর্গা পূজা এসে গেল। 


পুজো আসছে, আর বাকি ২১ দিন। সোশ্যাল মিডিয়ায় চোখ রাখলেই এই ধরনের পোস্ট চোখে পড়ছে। আমরা যারা বাড়ির বাইরে বাইরে থাকি, তাদের কাছে পুজো মানে কিন্তু বাড়ি ফেরার আনন্দ। আলোয় মোড়া থাকবে আমার খুব চেনা গ্রাম, চেনা-অচেনা সব মানুষ, একরাশ হাসিমুখ, প্যান্ডেলের বাইরে লম্বা লাইন, ঢাকের আওয়াজ, ধুনোর গন্ধ...শঙ্খ, কাশঁর। কাশফুল ফুটে ওঠা,ঘন নীল আকাশ, বাতাসে হালকা শিরশিরে এক ঠান্ডা অনুভূতি- সব মিলে মিশে একটা অন্যরকমের ভালোলাগা। সব মিলিয়ে নস্টালজিয়ার ছোঁয়া, আমি আয়নার দিকে তাকিয়ে জুলফিতে আর দাড়ি দেখে চমকে উঠি, বাড়তে থাকা পেটের ওপর হালকা করে হাত বুলিয়ে নিজের মনেই গেয়ে উঠলাম "আমার যে দিন ভেসে গেছে..."।


"পুজো আসছে পুজো আসছে" কথাটা কানে বাজতেই মনে হল, সত্যিই তো বয়েস বেড়ে চলেছে।  লিখতে বসে যখন পুরনো কথাগুলো হাতড়ে বেড়াচ্ছি, বেশ বুঝতে পারছি যে যেই ঘটনাগুলো "এই তো সেদিন" বলে সামলে রেখেছিলাম, পায় পায় ১০ বছর হেঁটে পার হয়ে গেছে।


 পুজোর কথা বলতে গেলে অনেক কিছু বলতে হয়, কিন্তু আমার এতো নস্টালজিয়া নেই কারণ সময়ের সাথে সবকিছু পাল্টায় স্বাভাবিক রীতিতে, এবং সেটা মেনে নিতে হয়। যেটা পাল্টায় না সেটা হল এমন কিছু গল্প যা মনের ভিতর বাঁধা পড়ে আছে... পুজো আসতেই আগল খুলে ছড়িয়ে পড়বে রন্ধ্রে রন্ধ্রে।


তুই তখন এস এস সি পরীক্ষার্থী। "আমাকে পুজোয় ঠাকুর দেখাতে নিয়ে যাবে?" আমাদের গল্পটা শুরু হয়েছিল এরকমই একটা ফোন কল দিয়ে। সে বছর পুজোর অষ্টমীর দিনটা বড্ড ভালো কেটেছিল। ঠাকুর দেখা, অঞ্জলি নেওয়া, প্রচণ্ড ভিড়ের মাঝখানেও একে অপরকে চোখে খুঁজে নেওয়া, প্রথম হাত ধরা, আর সব শেষে প্যান্ডেলের পিছনের অন্ধকারে আলতো করে ঠোঁটে ঠোঁট রাখা। সব মনে আছে স্পষ্ট করে, যেন কালকেই ঘটেছে সবকিছু। এখনো পুজোর ঢাক বাজলে চোখের সামনে সিনেমার রিলের মত চলতে থাকে সবকিছু। দশমীর দিন ওর হঠাৎ রেগে যাওয়া। কই, আমি তো কিছুই ভুলিনি?


আমার গল্পে বেকারত্বের জ্বালা ছিলনা, পকেটে একশ টাকা নিয়ে ঝাঁ চকচকে শপিং মলের সামনে দাঁড়িয়ে থাকার অসহায়তা ছিলনা, তোকে হারানোর ভয়ও ছিলনা...তবু কেন ভুল হল ঠিক সময়ে ভালোবাসার কথা বলতে পারার পরেও ? এই শরতে তোর হাতে আমার প্রিয় শিউলি ফুলের ছবি পেলাম তার পর ও কেন, আজ আমাদের মধ্যে একরাশ শূন্যতা, না পাওয়ার ভয়। এই পুজোতে তুই তোর প্রিয় শাড়ি পড়বি হয়তো, আর আমি দাঁত দিয়ে ঠোঁট কামড়ে ধরে হেঁটে যাবো কোনও পুরনো রাস্তা ধরে। তবুও পুরো পুজো জুড়ে শুধু তোর কথাই মনে পড়বে। আমি জানি, কোথাও না কোথাও গিয়ে তোরও আমার কথা একটু হলেও মনে পড়বে। এই মনখারাপের মধ্যে দিয়েই কোথাও না কোথাও আমার চোখ ছুঁয়ে ফেলবে তোর চোখ। বিচ্ছিন্নতাই জীবনের ধর্ম। মহানবমীর পর বিজয়া দশমীর দীর্ঘশ্বাস তো সে কথাই জানান দিতে প্রস্তুত হয়ে আছে !মুহূর্তের মিলনের পর দীর্ঘ বিচ্ছেদ, আরেকটা মহামিলনের আশায় আশায় ভাবতে ভাবতে মৃত্যুহীন আশাগুলো আবারও রয়ে গেল, কষ্টের আতুড়ঘরে, কেবল স্মৃতি গুলো নিয়ে। আবারও সেই একাকীত্বতার অনুশাসনপর্ব! সেই একই ভাবে মর্মান্তিক আত্মহননে হেরে হেরে গিয়ে আবারও বেঁচে ওঠা! আবারও সেই ভাঙা অনিচ্ছুক হাসিকেই, সংকল্পে বহন করা, মরচে ধরা কঙ্কালে!!!... ভালো থাকিস,প্রীয়তা।

Comments

Popular posts from this blog

ব্যথার আদরে অবুঝ আঙুল রাখলাম

দাদু নেই আর

ভালবাসার গুরুত্ব