Posts

Showing posts from 2020

দাদু নেই আর

 শৈশবে যার হাত ধরে, যার আদরে বেড়ে উঠি, যদি আমার জীবনকালের একমাত্র সুখের স্মৃতির পাতা কেউ আমাকে খুঁড়ে আনতে বলে তাহলে একটা মাত্র নাম আমার মন থেকে ওঠে আসবে, - দাদু। আমার বাপের বাপ। দাদুর মৃত্যুর পর পৃথিবীতে আজ দাদু বিহীন একটি দিন। . সম্পর্কের সূতোর মতো এমন অভেদ্য সূতো জগতে আর একটিও নেই। ভালোবাসা বুকের নিবিড় জমিনে বেড়ে উঠে সযত্নে। আমাদের সম্পর্ক একদম নাভীমূল থেকে উৎসারিত ছিলো এই সত্যটুকু আমরা জানি দাদু, তাই তোমার অস্তিত্বহীনতা নিয়ে আমার কোন ভ্রুক্ষেপ নেই। ভালোবাসাতো পাত্র বিচারে হয়না, উপস্থিতি কিংবা অনুপস্থিতিও মুখ্য নয়। ভালোবাসা ভালোবাসারই মত চিরন্তন বহতা নদীর স্রোত—সে জানে না নদীর অপারগতা কিংবা চরের দুর্দণ্ড প্রতাপশালী মনোভাব। ভালোবাসা কেবল বহিয়াই চলে, কেবল বহিয়াই চলে। . কেউ যেনো ভুল করেও তোমার উপর বিরক্ত না হয় এরকম একটা দিনে তুমি নিজেকে গুটিয়ে নিলে—একেবারে চুপচাপ, কাউকে তোমার কষ্ট বুঝার আক্ষেপটুকু পর্যন্ত না দিয়ে। কে জানে, পিছে আবার কে বিরক্ত হয় তোমার শেষবেলাতে? জগতে তুমিতো কম দেখোনি মানুষের প্রতাপী মুখ। তোমার গর্ভের সন্তানেরা পর্যন্ত তোমাকে কম শেখায়নি, দাদু। তুমি একদম বুদ্ধিমানের ম...

প্রিয়তা

  'যার জন্য আমি কাতর, সে ঘোরে গায়ে মেখে আতর তব নীলিমায়!' মাঝেমধ্যে ইচ্ছে করে আমাদের মধ্যকার অমিমাংসীত বিষয়গুলো হাইকোর্টের আপিল বিভাগে তুলে ধরি। কোর্টের জারিকৃত সমনের হাজিরা দিতে তুমি এলে, বারান্দায় আমাদের মুখোমুখি না হোক, আড়চোখে চোখাচোখি হোক। দ্বিধাও আজকাল আর আমাকে দ্বিধাবিভক্ত করতে পারছে না। কেবলই মনে হয়, এই শহরে সবাই সুউচ্চ অট্টালিকা গড়লো, অথচ কেউ হৃদয় গড়লো না। . জীবনের এমন একজনই থাকে, যে পাশে থাকলে সব সহজ আর সুন্দর মনে হয়। হারিয়ে ফেলার আশংকা আমার কাছে ঠিক তখনই ভীতিকর যেখানে তোমার নাম জড়িয়ে থাকে। এই যে তোমার জন্য আমার অস্থিরতা এটা তোমাকে জানাতে ইচ্ছে করে। বলতে ইচ্ছে করে, তোমার প্রতি আমার আবেগ সমুদ্রের সবচেয়ে উঁচু ঢেউকে হার মানায়। জানান দিতে চাই, কেবল তোমার জানার পর থেকে আমার জীবনে ভা-লো-বা-সি বর্ণ চারটি পাশাপাশি বসে নিজেদের জন্য একটা অর্থ খুঁজে নিয়েছে। . অনেক দিনের ইচ্ছে আমাদের নিয়ে একটা গল্প লিখি, রাজা-রানীর গল্প নয়; গল্পটা হবে এক সংবেদনশীল ছেলের এবং একজন অবুঝ মেয়ের! এমন তো নয় যে, সংসদে বিল উত্থাপন করে, সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে পাশ করিয়ে, আমাদের ভালোবাসার ফলাফল প্রকাশ হবে। তার...

প্রেম

 মানুষ প্রেমে পড়ে কদাচিৎ; সুন্দর সময়ে, সুন্দর মুহূর্তে, অনুকূল পরিবেশে। আর আমি প্রেমে পড়ি হাটে, মাঠে, ঘাটে, মেলা, ময়দানে, পার্কে, কফিশপে, রেস্তোরাই, শপিংমলে। আমার প্রেম শুরু হয় যেখানে, শেষও হয় সেখানেই, শুধু “রেশ” টা রয়ে যায় পরবর্তী কয়েক দিন। পেটে খাবার না থাকলে কেবল মাত্র প্রেম আমাকে আকূল করতে পারে, ব্যাকুল করতে পারে, ভাবাতে পারে, কাঁদাতে পারে। তাই তো রেশ থেকে যাওয়া প্রেমের কূলখানিটা প্রায়শ-ই আমাকে বেশ ঘটা করেই করতে হয়। .  “আমি আবার প্রেম ছাড়া থাকতে পারি না”। এবং তাদের জন্য আমার দুঃখ-ই হয়, যাদের জীবনে প্রেম আসে না।ভালোবাসতে আসলে জানে ক’জন? অনেক ক্ষেত্রেই অনেকেই প্রেমিক-প্রেমিকা হয়ে ওঠে ঠিক-ই; ‘হৃদয়জন’ আর হয়ে ওঠে না। কেবল স্বীকৃ্তি চায়। কিন্তু বন্ধনেই তাদের যত ভয়। কত মানুষের হাত ধরা-ছাড়ার দর্শক হলাম সে গল্প অন্য দিনের জন্য থাক। শুধু মনে হয় “হাত ধরা কিংবা ছেড়ে দেয়া সহজ। সারাজীবন সমানুভূতি নিয়ে পাশাপাশি থাকা সহজ নয়”। . মেয়েদের মতো হৃদয়হীন সৃষ্টি আর একটিও নেই। কেবল মেয়ে জাতি-ই পারে বিয়ের মেকাপ নিতে নিতে এক্স বয়ফ্রেন্ডকে কল দিয়ে বলতে, “এই বিয়েতে আমার কোনো মত ছিলো না। তুমি আমার উপর ...

শূন্যতা খুঁজি

 ব্যথার আদরে অবুঝ আঙুল রাখলাম… সংসার তো হিসেবের জায়গা; কি পেলাম কি পেলাম না। এখানে পছন্দের মানুষের সাথে বিয়ে হলে ভাল, না হলেও ক্ষতি নেই। ভালবাসলে চাওয়া-পাওয়াটা অপার্থিব হয়ে যায়। সারাক্ষণ হারানোর ভয় কাজ করে। তার চেয়ে বরং এখন ভালো আছি, এটা ধরে নিয়ে যে তুমি বিয়ের পর বেশি ভালোবাসবে। একটা সময়ে এইসব গোপন অভিমান বেঁচে থাকার অক্সিজেন। যাকে ভালোবাসি না তার সাথে সংসার করলে নির্ভার থাকা যায়। . বাঁচে তো সবাই, সৎ সাহস নিয়ে বাঁচে ক’জন। সত্য প্রকাশের সাহস না থাকায় কেউ কেউ একটা পুরোজীবন মিথ্যের সাথে কাটিয়ে দেয়। মানুষকে তার মনের সবথেকে শুদ্ধ ইচ্ছেগুলোকেই গোপন রাখতে হয়। একটা তুমুল জীবন কাটানোর পরিকল্পনা নিয়ে প্রতিদিন নতুন নতুন আপোষ করে যেতে হয়! . ‘ইদানিং নাকি অসহ্য রকম জটিল হয়ে যাচ্ছি! কথার ঘুরপাকে, গল্পের উপসংহারে শূন্য শূন্যতা খুঁজি সরল পথে ড্রেজার হয়ে পাথরে পাথর খুঁড়ি!’ ® মল্লিক 

প্রাক্তন

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখলাম, আজ প্রাক্তনকে ক্ষমা করার দিন। সম্ভবত ২০১৮সাল থেকে এই দিনটা পালন করা শুরু হয়েছে। প্রশ্ন উঠতে পারে, ক্ষমা কি আয়োজন করে করার মত বিষয়। আবার অনেকে আক্ষেপ করে বলেন, কেউ কি ক্ষমা চেয়েছে যে ক্ষমা করবো? কিছু কিছু ক্ষমা তো মানুষকে তার নিজে জন্যই করতে হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে মহা ধ্বংসযজ্ঞ শেষে জীবনের সব হারানো মানুষগুলো একটা গনজামায়েত করে চিৎকার করে ক্ষমা করে দিয়েছিলেন তাদেরকে, যারা নির্বিচারে হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছিল। . চেনামানুষ সময়ের আবর্তে অচেনা হলে যা হয়, মনের ভিতর প্রশ্নের প্রতিযোগ; কেমন আছো, ঘুম হয় ঠিক মতো, চোখের নিচে কালি কেন? জানতে ইচ্ছে করে, প্লে লিষ্টে কী গান চলে... নানান চিন্তার প্রতিফলন দেয়ালের গায়ে নিঃসঙ্গ প্রজাপতির মতো ঘুরে বেড়ায়। মানুষের মনের ক্ষত সম্ভবত তার ঘৃণার সমান বড়। গল্প-উপন্যাস আপনাকে শেখাবে কিভাবে একটা পুরো জীবন ক্ষমা না করে, অভিমান পুষে রেখে কাটিয়ে দেয়া যায়। আমি বলি কি, প্রাক্তনের সাথে সহজ মনোভাব নিয়েও বেঁচে থাকা যায়। ভালোবাসা অনুভব করার ক্ষমতা তো সবার থাকে না। আর ক্ষমা যদি না করতে পারেন তাহলে জীবনে সামনে এগোবেন কিভাবে? . আজকাল মানুষ বিচ্ছেদকে...

দুর্গাপূজা, এবং এক অধরা প্রেম

উপরে নীল আকাশ আর নীচে নদীর পাশে ফোটা কাশঁফুল মায়ের আগমনীকেই নির্দেশ করে। দেখতে দেখতে দূর্গা পূজা এসে গেল।  পুজো আসছে, আর বাকি ২১ দিন। সোশ্যাল মিডিয়ায় চোখ রাখলেই এই ধরনের পোস্ট চোখে পড়ছে। আমরা যারা বাড়ির বাইরে বাইরে থাকি, তাদের কাছে পুজো মানে কিন্তু বাড়ি ফেরার আনন্দ। আলোয় মোড়া থাকবে আমার খুব চেনা গ্রাম, চেনা-অচেনা সব মানুষ, একরাশ হাসিমুখ, প্যান্ডেলের বাইরে লম্বা লাইন, ঢাকের আওয়াজ, ধুনোর গন্ধ...শঙ্খ, কাশঁর। কাশফুল ফুটে ওঠা,ঘন নীল আকাশ, বাতাসে হালকা শিরশিরে এক ঠান্ডা অনুভূতি- সব মিলে মিশে একটা অন্যরকমের ভালোলাগা। সব মিলিয়ে নস্টালজিয়ার ছোঁয়া, আমি আয়নার দিকে তাকিয়ে জুলফিতে আর দাড়ি দেখে চমকে উঠি, বাড়তে থাকা পেটের ওপর হালকা করে হাত বুলিয়ে নিজের মনেই গেয়ে উঠলাম "আমার যে দিন ভেসে গেছে..."। "পুজো আসছে পুজো আসছে" কথাটা কানে বাজতেই মনে হল, সত্যিই তো বয়েস বেড়ে চলেছে।  লিখতে বসে যখন পুরনো কথাগুলো হাতড়ে বেড়াচ্ছি, বেশ বুঝতে পারছি যে যেই ঘটনাগুলো "এই তো সেদিন" বলে সামলে রেখেছিলাম, পায় পায় ১০ বছর হেঁটে পার হয়ে গেছে।  পুজোর কথা বলতে গেলে অনেক কিছু বলতে হয়, কিন্তু আমার এতো ন...

মধ্যবিত্ত লজ্জা

বেঁচে থাকাটা বরাবরই কঠিন ছিল, এখন আরো বেশি হয়েছে । ঘরবন্দী জীবন । শূন্য পকেট । মধ্যবিত্ত লজ্জা ।

আবার আসিব ফিরে

Image
যে কবিতা আমাকে বারবার মুগ্ধ করে! বারবার চোখে জল আনে। বুকের মধ্যে হাহাকার করে তোলে। জীবনানন্দ দাশ আবার আসিব ফিরে আবার আসিব ফিরে ধানসিঁড়িটির তীরে-এই বাংলায় হয়তো মানুষ নয় হয়তো বা শঙ্খচিল শালিকের বেশে হয়তো ভোরের কাক হয়ে এই কার্তিকের নবান্নের দেশে কুয়াশার বুকে ভেসে একদিন আসিব এ কাঁঠাল-ছায়ায়; হয়তো বা হাঁস হব- কিশোরীর-ঘুঙুর রহিবে লাল পায়, সারা দিন কেটে যাবে কলমির গন্ধ ভরা জলে ভেসে ভেসে; আবার আসিব আমি বাংলার নদী মাঠ ক্ষেত ভালবেসে জলাঙ্গীর ঢেউয়ে ভেজা বাংরার এ সবুজ করুণ ডাঙায়; হয়তো দেখিবে চেয়ে সুদর্শন উড়িতেছে সন্ধ্যার বাতাসে। হয়তো শুনিবে এক লক্ষ্মীপেঁচা ডাকিতেছে শিমূলের ডালে। হয়তো খইয়ের ধান ছড়াতেছে শিশু এক উঠানের ঘাসে। রূপসার ঘোলা জলে হয়তো কিশোর এক সাদা ছেঁড়া পালে ডিঙ্গা বায়; রাঙ্গা মেঘ সাঁতরায়ে অন্ধকারে আসিতেছে নীড়ে দেখিবে ধবল বক; আমারেই পাবে তুমি ইহাদের ভীড়ে।